গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা ও করণীয় বিষয়গুলো জানুন
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা ও করণীয়, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে যা খাবেন, গর্ভাবস্থায় কি এড়ানো উচিত এবং গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোকপাত করা হয়েছে।
আপনারা যারা এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদেরকে আজকের আর্টিকেলে স্বাগতম জানাই।
ভূমিকা
প্রিয় বন্ধুগণ এই পোস্টটিতে গর্ভকালীন সময়ে একজন মহিলাকে কিভাবে মেনে চলা উচিত, গর্ভকালীন সময়ে কিছু সমস্যা দেখা যায় সেই সম্পর্কে এবং করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে এই পোস্টটিতে অনেক ইনফরমেটিভ তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
আপনারা অনেকেই গর্ভকালীন সময়ে একজন মহিলার কেমন বা কিভাবে যত্ন নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানেন না। এজন্য তথ্য পেতে ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। আপনারা এই সমস্যার সমাধান পেতে চাইলে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। আমি আশা করি আপনার উপকৃত হবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যা খাবেন, যা খাবেন না সেসব জেনে নিন
গর্ভধারণের পর থেকেই নিজের এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। জীবনের সব পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্যভাস মেনে চলা খুবই জরুরী।
প্রথম তিন মাস খাদ্য তালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার। এসব পুষ্টি উপাদান আপনার ভ্রুনের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার বিকশিত হওয়া এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করবে। তবে প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা হয়ে থাকে এজন্য গর্ভধারণের পর খাদ্যাভাসের বিষয়ে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস যা খাবেন, সেগুলো হলোঃ
* জিংক- একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন। শরীরের কোষ গঠনের জন্য জিংক অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান।
তাই এ সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ডাক্তার আপনাকে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জিংক সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, ছোলা, ডিম, আলমন্ড, চিনা বাদাম, সিমের বিচি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদি খাদ্য তালিকা প্রতিদিন রাখতে হবে।
* ক্যালসিয়াম- গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীর মায়ের হাড় থেকে গর্ভের শিশুর শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
তাই মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন-দুধ, দই, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ব্রকলি, পালং শাক, ডুমুর, চিয়া সিড, ডিম, আলমন্ড ইত্যাদি খাবার ক্যালসিয়ামে ভরপুর।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথম তিন মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
* প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যে সমস্ত খাবারে প্রোটিন পাওয়া যায় এগুলো প্রতিদিন খেতে হবে এতে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবে যেমন তেমনি ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য ব্যাপক কাজ করবে। যেমন-ডিম, মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে।
* ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করলে শিশুর শৈশবে চোখের দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশ খুব ভালোভাবে হয়। এছাড়া ও শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ভিটামিন এ, ডি ও সি যুক্ত খাবার প্রচুর খাওয়া দরকার। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০-১৫ মিনিট শরীরের রোদ লাগাতে হবে।
* আঁশ জাতীয় খাবার- এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কমন একটি বিষয়। সমস্যা কমাতে খাবার যেমন ওটস, বাদামী ভাত, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রুকলি, শাকসবজি ইত্যাদি খাবেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা দরকার।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে যা খাবেন নাঃ
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের খাবারের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন থাকতে হবে যা থেকে গর্ভের সন্তান পুষ্টি এবং ভিটামিন পেয়ে থাকে। তাই অনেক সময় আমরা না বুঝে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে ফেলি যা গর্ভের সন্তান এবং মা উভয়ের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে কি খাওয়া যাবে সেটা যেমন জরুরি তেমনি কি খাওয়া যাবেনা সেটাও জানা দরকার। যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা, সেগুলো হল:
* কলিজা-কলিজা বা কলিজা দিয়ে তৈরি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে খুবই বিপদজনক। এ সময় আপনার জন্য কতটুকু ভিটামিন গ্রহণযোগ্য সেটা ডাক্তারের কাছ থেকে শুনে নিতে হবে।
অনেকে প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত ভিটামিন খাওয়া শুরু করেন যেটা গর্ভের বাচ্চার জন্য খুব ভালো সেটা বলা যাবে না। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস না বুঝে না জেনে বা ডাক্তারের সাথে কথা না বলে অতিরিক্ত কিছুই খাওয়া ঠিক হবে না।
* অপাস্তরিত দুধ-অপাস্তরিত দুধ বলতে কাঁচা দুধকে বোঝানো হয়। গ্রামে অনেক সময় ধারণা করা হয় কাঁচা গরুর দুধ খাওয়ালে বাচ্চা এবং মায়ের জন্য ভালো তবে এই ধারণাটা সঠিক নয়। কারণ দুধকে পাস্তরিত করাই হয় যাতে দুধের ভেতর থাকা জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
* কাঁচা ডিম- কাচা ডিম যেমন খাওয়া যাবেনা তেমনি কাচা ডিমের তৈরি করা খাবার যেমন মেয়োনিজ হতে শুরু করে কাস্টার্ড ও খাওয়া যাবে না। তবে ডিম যদি রান্না করা হয় অথবা ভালোভাবে ভাজি করা থাকে তাহলে সমস্যা নেই।
কাঁচা ডিম থেকে সাল্মানিল্লা নামক একটি রোগের সম্ভাবনা থাকে যা গর্ভাবস্থায় দেখা যায়। তাই এ সময় কাচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* আনারস- আনারসে রয়েছে ব্রমিলিন নামের উচ্ছেচক যা গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হয়ে যেতে পারে প্রথম তিন মাস এ ফলটি না খাওয়াই ভালো।
* কাঁচা পেঁপে-গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে একেবারে খাওয়া যাবেনা। কাঁচা পেঁপের পেপসিন ও পেপাইন ভ্রূণের ক্ষতি করে। আবার পেঁপের লাটেক্স গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
* কাঁচা সবজি ও আধা সেদ্ধ মাংস- গর্ভাবস্থায় কাঁচা সবজি বা আধা সেদ্ধ মাংস কোনটাই খাওয়া যাবে না। কাঁচা সবজিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে আর মাংস ভালো করে রান্না না করা হলে তা মারাত্মক ফুড পয়জনিংএর কারণ হতে পারে।
* পনির বা চিজ- এটা গর্ভাবস্থায় খুবই বিপদজনক একটি খাবার। কারণ এই চিজ গুলো সাধারণত পাস্তরিত থাকে না আর অপাস্তরিত এ সকল চিজ মা এবং গর্ভের বাচ্চার উভয়ের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
* চা বা কফি- একজন গর্ভবতী মা কতটুকু ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে গ্রহণ করতে হবে। তবে কিছু চিকিৎসক গর্ভবতী মাকে ক্যাফেইন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন কারণ ক্যাফেইন সরাসরি মায়ের প্লাসেন্টা তে গিয়ে বেবির হৃদপিন্ডে ভূমিকা রাখে।
গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা ও করণীয় বিষয়গুলো জানুন
গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ অসুবিধাগুলো স্বাভাবিক তবে কিছু সমস্যা মারাত্মক ও বটে। এ সময়ে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন হতে থাকে ফলে সব গর্ভবতী মায়ের সাধারণ কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। আসুন গর্ভকালীন মায়েদের এসব সমস্যার ব্যাপারে জেনে নেই।
১. ক্লান্তি ও অবসাদ-প্রেগনেন্সিতে প্রতিনিয়ত হরমোন লেভেলের উঠানামার কারণে শারীরিক ও মানসিক নানা ধরনের পরিবর্তন হতে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি ও অবসাদ আসাটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
এটা কমানোর জন্য যা করা যেতে পারে যখনই হাতে সময় থাকবে, একটু রেস্ট নিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে।
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খেতে হবে ভাজাপোড়া, জাঙ্ক ফুড একেবারে খাওয়া যাবেনা। প্রচুর প্রোটিন ও লৌহ সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
২. বমি বমি ভাব- বমি বমি ভাব, বার বার বমি হওয়া, গা গোলানো যাকে ডাক্তারের ভাষা বলা হয় মর্নিং সিকনেস। প্রথম তিন মাস শরীরের হরমোনের ওঠা নামার কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
সাধারণত সকালের দিকে এটা বেশি হয়ে থাকে অধিকাংশ মায়ের ১৪ সপ্তাহ হবার পরে সমস্যা আস্তে আস্তে কমে যায়।
এজন্য যেটা করা যেতে পারে ঘুম ভাঙার পর বিছানায় কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর বিছানা থেকে নামতে হবে। তাড়াহুড়া করে কোন কাজ করা যাবে না। একেবারে বেশি খাবার খাওয়ার পরিবর্তে বারবার অল্প করে হালকা কিছু খেতে হবে গর্ভাবস্থায় পাকস্থলী কখনো একদম খালি রাখা ঠিক নয়।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যেন বারবার বমি হলেও শরীরের ডি হাইড্রেশন না হয়। তবে বমি প্রতিরোধক ঔষধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া- গর্ভাবস্থায় প্রচুর পানি পান করার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে ও শেষের দিকে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়ে থাকে। প্রচুর পানি খেতে হবে কোন ভাবে পানির পরিমাণ কমানো যাবে না।
অনেকে প্রস্রাব বেশি হচ্ছে ভেবে পানি খাওয়া কমিয়ে দেন তবে এটা ঠিক নয়। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়েরা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না সে ক্ষেত্রে স্যানেটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
৪. বুক জ্বালা, বদহজম,ক্ষুধা মন্দা- এই সময়ে বদহজম, ক্ষুধা মন্দা,বুক জ্বালাপোড়া এগুলো খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় পাকস্থলীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পরে, ফলে খাবার পাকস্থলী থেকে অন্ননালিতে চলে আসে।
এ থেকে মুখে টকভাব, বুক জ্বালাপোড়া, ঢেকুরের মতো সমস্যা হতে পারে।এজন্য বারবার অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে। ঘুমানোর একদম আগে কিছু খাওয়া যাবেনা, খেয়ে শুয়ে পড়া যাবে না, খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
তরল জাতীয় খাবার, পানি, ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। ভাজাপোড়া ও মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টাসিড খাওয়া যাবে না।
৫. মাথাব্যথা- হরমোন, রক্তের শর্করা কমে যাওয়া, ট্রেস, এ সকল কারণে এ সময় মাথাব্যথা খুবই কমন একটি বিষয়। এজন্য রক্তের শর্করার পরিমাণ যেন কমে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে, বেশি বেশি করে বিশ্রাম নিতে হবে।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ- গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে অনেকের পায়ুপথ থেকে রক্তপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাবার পরিপাক ও শোষণে অতিরিক্ত সময় লাগে। ধীরগতির পরিপাক ক্রিয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
এজন্য হালকা ব্যায়াম করলে তাড়াতাড়ি হজম হয়, তরল, আঁশযুক্ত খাবার তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে।
৭. পিঠে ব্যথা- অধিকাংশ গর্ভকালীন মায়েদের লো ব্যাক পেইন হতে পারে। এজন্য বারবার নিজের বসার স্থান বদলাতে হবে। একই জায়গায় বেশিক্ষণ বসা যাবে না। কোন ভারী কাজ করা ঠিক হবে না ।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোমরে বেল্ট ব্যবহার করা যাবে না।
গর্ভকালীন সময়ে হবু মায়েদের ১০টি করণীয় ও সতর্কতা জানুন
গর্ভকালীন সময়ে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয় অনাগত শিশু ও নিজের সুস্থতা নিয়ে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত যত্নের। গর্ভকালীন সময় হবু মায়েদের জন্য করণীয় কাজগুলো প্রত্যেকটি মেয়েদের জানা খুবই জরুরী।
১) পর্যাপ্ত পানি ও তরল জাতীয় পানীয় পান করা- গর্ভকালীন সময়ে মহিলারা প্রায় ডিহাইডেটেড হয়ে থাকে। এজন্য প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও বিভিন্ন ফলের রস খাওয়ার কারণে মুত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার খাওয়া- গর্ভবতী মায়েদের জন্য দরকার সুষম খাদ্য এছাড়াও প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস,দুধ জাতীয় খাবার। প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল ও শাকসবজি খেতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ে যে খাবার খাওয়াই হোক না কেন সেটা যেন ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত হয়। তাই যেসব খাবারে প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন বেশি পাওয়া যায় সে সকল খাবার প্রতিদিন খাবার তালিকা রাখতে হবে। এ সময় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৩) যে কাজগুলো করা যাবে আর যা করা যাবে না- নারীর গর্ভকালীন সময়ে প্রথম দু-তিন মাস ও শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারি জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। পিচ্ছিল স্থানে হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ সময় তাড়াহুড়া করে কোন কাজ বা ভারি কোন দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করার কাজ করা যাবে না। হালকা কিছু ব্যায়াম করা উচিত এ সময়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।
৪) ঘুম- এ সময় দিনের বেলা কমপক্ষে দু-ঘন্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুম জরুরী। ঘুমানো বা বিশ্রামের সময় বা-কাত হয়ে শোয়া ভালো।
৫) মানসিক প্রশান্তি- গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ট্রেস, ভয়, অতিরিক্ত আবেগ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে এগুলো হবু মায়ের ও গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ ই শুধু একটা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।
৬) শরীরের বিশেষ যত্ন ও রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ- এ সময় প্রতিদিন সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে, হাত ও পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।
গর্ভকালে মায়েদের দাঁত ও মাড়ির বিষয় যত্ন নিতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। এ সময় উঁচু হিল পড়া যাবে না।
৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে অবশ্যই টিটেনাসের টিকা দিতে হবে। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স ইত্যাদি ছোয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে।
৭) ভ্রমণ- গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো।উঁচু- নিচু পথ এবং যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে।
৮) গর্ভকালীন সময় নিয়মিত চিকিৎসা- গর্ভকালীন সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চললে আপনার এবং আপনার সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না। এ সময় প্রতি মাসে ভালো গাইনোকোলজিস্ট দেখানো দরকার। এ ব্যাপারে অবহেলা করা যাবে না।
গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, ডেলিভারির আগে অবশ্যই রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ওষুধ সেবন করা যাবে না এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
৯) ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিত্যাগ করা- ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা, কফি পান করলে রক্তচাপ সহ দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এসব পানীয় অনেকের উদ্বিগ্নতা ও বিরক্তিভাব বাড়ায়। তাই এ সময় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ না করাই ভালো। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খুব অল্প পরিমাণে পান করা যেতে পারে।
১০) হবু মায়ের প্রতি পরিবারের ভূমিকা- গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশু ভালো থাকার জন্য সবার আগে পরিবারের ভূমিকা অনেক বড়। এ সময় নারীদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হয় এজন্য প্রয়োজন পড়ে কাছের মানুষের একান্ত সান্নিধ্যের।
আপনার সঙ্গীর সাথে একান্ত সময় কাটানোর চেষ্টা করুন, তার ভুল দেখলে রাগারাগি না করে সাহায্য করুন সেই সাথে আপনার কোন কিছু খারাপ লাগলে তাকে জানাতে ভুলবেন না।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত আবেগ, ভয়, রোগ-শোক, মানসিক চাপ ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তাই এসব থেকে দূরে থেকে ভালো চিন্তা করতে হবে। প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস স্বামী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।
পানিশূন্যতা রোধের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ সময় সকল ধরনের ভাজাপোড়া, মসলা জাতীয় খাবার ও অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
যে সমস্ত খাবার খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যেমন, কাঁচা পেঁপে, অপাস্তরিত দুধ, কাঁচা মাংস, আধা সেদ্ধ সবজি এগুলো খাওয়া যাবেনা। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
গর্ভাবস্থায় কী এড়ানো উচিত জেনে নেওয়া যাক
গর্ভকালীন সময়ে প্রতিটা নারীকে অনেক সাবধানে থাকতে হয়। প্রতিটা পদক্ষেপ খুব ভাবনা চিন্তা করে চলতে হয়। এই সময় মায়েদের ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এজন্য আপনার শরীরের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু অভ্যাস বদলাতে হবে।
আপনার গর্ভে বড় হতে থাকা শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে গর্ভকালে কিছু বিষয়ে এড়িয়ে চলা উচিত।
গর্ভকালীন সময়ে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিগুণে ভরপুর এমন খাবার গ্রহণ করা যেমন জরুরী তেমনি ক্ষতি হতে পারে এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা।
- * কাঁচা বা অপাস্তরিত দুধ
- * মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার
- * কাঁচা শাক-সবজি
- * কাঁচা ডিম
- * কাঁচা পেঁপে
- * কাঁচা মাংস
- * অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার
- * পনির জাতীয় খাবার ইত্যাদি
ধূমপান বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় থেকে বিরত থাকা-গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান বিপদজনক। অ্যালকোহলের সংস্পর্শে আসা শিশুদের প্রতিবন্ধি হবার ঝুঁকি তৈরি হয় এবং তাদের স্নায়ু জনিত রোগ হতে পারে।
তাছাড়া ধূমপান করার কারণে গর্ভে থাকা শিশুর হাঁপানি বা অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
ভারী ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা যাবে না- ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তবে এমন কোন ব্যায়াম করা যাবে না যার কারণে পেটে চাপ পড়ে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস যোগ ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
বেশি জোরে হাটবেন না- এ সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বেশি জোরে হাটা উচিত নয়। ফাঁকা জায়গায় আস্তে আস্তে হাঁটুন এবং রাস্তা বা ভিড় জায়গায় হাটা এড়িয়ে চলুন।
ক্যামিকেল যুক্ত জিনিস- এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক পণ্য যেমন ভিনেগার বা বেকিং সোডা ব্যবহার করুন। গর্ভাবস্থায় কেমিক্যালযুক্ত ক্লিনিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করা একেবারেই ঠিক নয়।
সিঁড়ি ব্যবহার- গর্ভাবস্থার সময় সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে বারণ করা হয় কারণ এতে পড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ঝাড়ু দেওয়া, নোংরা পরিষ্কার, কাপড় চোপড় ধোয়ার জন্য বারবার ঢুকে যেতে হয় এমন ধরনের কাজ করা এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় প্রতিটা মেয়েই কঠিন সময় পার করে থাকে। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস অনেকটাই ক্রিটিকাল সময়। গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা তা আপনার গাইনি চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে নিতে হবে।
কেননা কিছু খাবার আছে গর্ভাবস্থায় খেলে উপকার পাওয়া যায় আবার কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো পরিহার করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
# আনারস- আনারসে ব্রোমলিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা গর্ভের সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়। তাছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হয়ে যেতে পারে তাই প্রথম তিন মাস এ ফলটি না খাওয়াই ভালো।
# কাঁচা পেঁপে- গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া উচিত না কারণ পেঁপেতে লাটেক্স নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যা গর্ভ জাত সন্তানের ক্ষতি করে।
# করলা- করলাতে গ্লাইকোলাইসিস, সেফনিক, মারোডিসিন নামক ক্ষতিকার পদার্থ থাকে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়।
না ধোয়া ফল এবং সবজি- গর্ভাবস্থায় না ধোওয়া ফল এবং সবজি কোনমতে খাওয়া যাবে না কেননা না ধোয়া ফল এবং সবজির খোসা গুলিতে ক্ষতিকারক কীটনাশক থাকে যা গর্ভের সন্তানের জন্য ব্যাপক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।
এছাড়া ফ্রিজে দীর্ঘদিন ফলমূল রেখে কোনভাবে খাওয়া যাবেনা এবং কোন অপরিষ্কার খাবারই খাওয়া উচিত নয়।
# আধা সেদ্ধ শাকসবজি- আধা সেদ্ধ শাকসবজি গর্ভাবস্থা খাওয়া যাবেনা কারণ এতে থাকা জীবাণু থেকে যায়। সবজি সিদ্ধ করা হয় যাতে এতে বিদ্যমান জীবাণু ধ্বংস হয়। তাই কাঁচা সবজি খাওয়া যাবেনা।
# সজিনা- সজিনা পুষ্টিকর সবজি হলেও এতে বিদ্যমান রয়েছে আলফা সিটেস্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান যা গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই গর্ব অবস্থায় সজিনা খাওয়া যাবেনা।
পরিশেষে
প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই পোস্টটি যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন আমি আশা করি আপনারা গর্ভকালীন নারীর কিভাবে যত্ন নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং আমি আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
এ ধরনের আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। সবশেষে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্যতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url