আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে বিস্তারিত জনুন
প্রিয় পাঠক আপনি যদি আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। কারণ এই আর্টিকেলটিতে আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা পাশাপাশি বাংলাদেশের সেরা ১০টি মাদ্রাসা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করছে এবং মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল কিন্তু খারাপ নয়। তারা আরবি শিক্ষার পাশাপাশি ,বর্তমানে ইংরেজি শিক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞান, শরীরচর্চায় ইত্যাদি নানান বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিন্তু পিছিয়ে থাকছে নেই।
ভুমিকা
প্রিয় পাঠক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান দুটি মাদ্রাসা আলিয়া মাদ্রাসা এবং কাওমি মাদ্রাসার ভূমিকা অপরসীম। প্রিয় পাঠক আমরা আজকের এই পোস্টটিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে আলোচনা করেছি।
বাংলাদেশের সেরা 10 টি মাদ্রাসা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছি, আদর্শ জাতি গঠনে মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। আমাদের দেশে আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মানবতার জন্য এবং আমাদের ইসলামিক সুন্নাহ শিক্ষা প্রদান করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থারও কিছু পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীরা ইসলামিক স্টাডি এর পাশাপাশি তারা মানবিক ,বিজ্ঞান, কলা ইত্যাদি বিষয়ক শিখতে পারছে।সে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং আলিয়া মাদ্রাসা ও কাওমি মাদ্রাসার যে পার্থক্য, তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
নিম্নে আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ
আলিয়া মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় কোরআন শিক্ষা, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।
কওমি মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রাণকেন্দ্র। এখানেও কোরআন হাদিস শাস্ত্রের উপরে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি কাওমি মাদ্রাসাতেও পড়ানো হয় বাংলা, ইংরেজি, সাহিত্য, ইতিহাস, গণিত ইত্যাদি তবে তুলনামূলকভাবে ইংরেজি ও গণিত কওমি মাদ্রাসাতে একটু কম পড়ানো হয়।
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণত বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। মাদ্রাসায় থাকাকালীন অবস্থায় শিক্ষকদের চাপে তারা ধর্ম কর্ম পালন করে, নামাজ কালাম পড়ে কিন্তু বাড়িতে চলে আসলে তখন নামাজ পড়ে না অনেকেই। পোশাক ও দাড়ি রাখার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে একটা অলস্য মনোভাব দেখা যায়।
অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় থেকেই পড়াশোনা করতে হয়। ২৪ ঘন্টা সেখানে থাকতে হয় ফলে নামাজ ও সুন্নতি পোশাক, দাড়ি রাখা, ওয়াজিব, সুন্নাহ ইত্যাদি মেনে চলার উপরে শিক্ষকদের জোর প্রচেষ্টা থাকে। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিষেধ মাদ্রাসায় থাকাকালীন অবস্থায়।
ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পর্দা প্রথা মেনে চলা উচিত এবং এটাকে ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ছেলে এবং মেয়ে একই ক্লাসরুমে পড়ার কারণে পর্দা প্রথা সেখানে থাকছে না। অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসায় ছেলে শিক্ষার্থী এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের আলাদা ব্যবস্থা থাকায়, সেখানে পর্দা প্রথা মেনে চলা হচ্ছে এবং শরীয়া মোতাবেক পর্দা করা বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার তালিকা জেনে নিন
- আল মারকাজুল ইসলামী আল সালাফি-রাজশাহী মহানগর
- পাবনা ইসলামিয়া মাদ্রাসা -সদর উপজেলা
- জোড়া খালি ফাজিল মাদ্রাসা -বগুড়া ,ধুনোট উপজেলা
- সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা-সিলেট, চৌহাট্টা
- ফটিকছড়ি জামিউল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা -ফটিকছড়ি উপজেলা
- জামিয়া কাসেমীয়া কামিল মাদ্রাসা-নরসিংদী সদর উপজেলা
- তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা-ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানা
- ধাপ সাতগাড়া বাইতুল মোকাররম মডেল কামিল মাদ্রাসা -রংপুর সদর উপজেলা
- ছারছিনা দারুস সুন্নাত কামিল মাদ্রাসা-পিরোজপুর নেছারাবাদ উপজেলা
- চরফ্যাশন কারা মাতিয়া কামিল মাদ্রাসা -ভোলা চরফ্যাশন উপজেলা
- খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা-খুলনা সদর
- আলমডাঙ্গা আলিম মাদ্রাসা-চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলা
- মোমেন সাহি দারুস সুন্নত কামিল মাদ্রাসা-ময়মনসিংহ সদর উপজেলা
উপরোক্ত আলিয়া মাদ্রাসা এগুলো ছাড়া আরো নামকরা ও ভালো আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে যেগুলো ইসলাম শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিম্নে কিছু কওমি মাদ্রাসার নাম ও ঠিকানা তুলে ধরা হলোঃ
- জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম -খুলনা
- জামিয়া এজাজিয়া দারুল উলুম-যশোর
- জামিয়া আরাবিয়া কাসিমুল উলুম -কুমিল্লা
- জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া -লালখান বাজার
- জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া-লালবাগ
- জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া -যাত্রাবাড়ী
- আল জামিয়া আল আসরাফিয়া-পাবনা
- আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম-বগুড়া
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মাদ্রাসা সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন
প্রিয় পাঠক এখানে বাংলাদেশের সেরা দশটি মাদ্রাসার নাম প্রকাশ করা হলোঃ
আল মারকাজুল ইসলামী আল সালাফি- এটি রাজশাহীতে অবস্থিত। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর নওদাপাড়া, সপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
সরকারি মুস্তাফা বিয়া আলিয়া মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি বগুড়ার নামাজগোড়-গোয়াল গাড়ি এলাকায় অবস্থিত। মাদ্রাসাটি ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জামিল মাদ্রাসা- এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় একটি মাদ্রাসা। ১৯৬৯ সালে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্থানটি ঠনঠনিয়া রোড, বগুড়া।
সাকুচিয়া বদিউজ্জামান দাখিল মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায়, উপজেলার নাম মনপুরা, গ্রাম চর গোয়ালিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকপাড়ার অবস্থিত। ১৯১৪ সালে আবু তাহের মুহাম্মদ ইউনুস দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সুজাউল সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় সুজাউল গ্রামের অবস্থিত। ১৮৯০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত অনেক পুরাতন একটি মাদ্রাসা।
মোহাম্মদবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি ঢাকা মিরপুর পাইকপাড়া অবস্থিত। ১৯৮৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধীপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গী বাড়িতে অবস্থিত। এটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নোপাইয়া হোগলটুরি হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা- বরিশালে এই মাদ্রাসা টি অবস্থিত। এটি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পশ্চিম শোরা আলিম মাদ্রাসা- এই মাদ্রাসাটির বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলা পশ্চিম শাওড়া অবস্থিত। এটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক আমরা জানি যে শিক্ষাই আলো, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং সুশিক্ষিত জাতি আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সৃষ্টিকর্তা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ইসলামিক জ্ঞান চর্চা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সে অনুযায়ী তারা জ্ঞান প্রদানও করেছে মানুষের মাঝে, সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম এবং আল্লাহ ওই সমস্ত ব্যক্তির মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ও ধর্মীয় জ্ঞানে ঈমান মজবুত করার মাধ্যমে, যারা পাক্কা ঈমানদার হয়েছে, এ সমস্ত ব্যক্তির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বেশি। তাই আদর্শ জাতি গঠনে আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
পরিশেষে
প্রিয় পাঠক বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষিত জাতি গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উপরে আলোচনার বিষয় ছিল আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা নিয়ে। এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url