নবজাতক শিশুর যত্ন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় টিপস সম্পর্কে জানুন | Rahul IT BD

নবজাতক শিশুর যত্ন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় টিপস সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে নবজাতক শিশুর যত্ন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, শীতে শিশুর যত্ন কিভাবে নেওয়া উচিত, প্রচন্ড গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার বিশেষ টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নবজাতক শিশুর যত্ন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় টিপস
তাই যারা এই সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আছেন তাদেরকে আজকের আর্টিকেলে স্বাগতম জানাই।

ভূমিকা

প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই আর্টিকেলে নবজাতক শিশুর কিভাবে যত্ন নেওয়া উচিত বা কেমন করে খেয়াল রাখা উচিত সে সম্পর্কে এই পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা অনেকেই বিশেষ করে প্রথম বাচ্চার মায়েদের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে অনেক ধারণা কম রয়েছে। 

তারা নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া সম্পর্কে জানার জন্য ইন্টারনেটের সার্চ করে থাকে। তাদের কথা চিন্তা করে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। এই পোস্টটি অনেক বেশি ইনফরমেটিভ হবে। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকেন। 

আশা করি আপনারা নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে যা জানতে চান তা এই পোস্টটির মাধ্যমে সমাধান পাবেন।

নবজাতক শিশুর যত্ন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় টিপস সম্পর্কে জেনে নিন

পরিবারে যখন নতুন অতিথি আসার খবর পাই তখন আমাদের খুশির সীমা থাকে না। সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকি নতুন শিশুর আগমন উপলক্ষে। কিভাবে যত্ন নেব, কখন কি করব, কি করলে ভালো হবে এমন হাজারো প্রশ্ন মায়ের মনে জাগে। 

আর নতুন বাবা-মায়ের জন্য নবজাতক শিশু যত্ন নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং বটে। নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার আগে আমাদের জানা উচিত নবজাতক কি। সব শিশুই নবজাতক নয়। নবজাতকের নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। জন্মের পর পর শিশুটি কে বলা হয় নবজাতক। 

জন্মের পর থেকে শুরু করে শূন্য থেকে 28 দিন পর্যন্ত যে বয়স রয়েছে তাকে নবজাতক বলা হয়। নবজাতক শিশুর যত্নের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারলে বোঝা যাবে নবজাতকের সর্বোত্তম যত্ন হচ্ছে। টিপস গুলো হল:

* বুকের দুধ পান করানো-নবজাতকের জন্মের পর পরই বুকের দুধ পান করানো শুরু করা খুবই জরুরী। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শাল দুধ বের হয়, সেটি পুষ্টিগুণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ভরপুর। দুধ খাওয়াতে শুরু করলে মায়ের বুকের দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটি দ্রুত দুধ খাওয়া শিখে যাবে।

* শিশুকে একটি মোটা তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে না রেখে কয়েক স্তন নরম সুতি কাপড় দিয়ে পেঁচানো ভালো। বাজার থেকে কাপড় কিনে সরাসরি শিশুকে না পরিয়ে, ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর পড়ানো উচিত।

* শিশু প্রসবের পর পরই নাভিটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটাতে হবে এবং দুটি জীবন মুক্ত ক্লিপ বা সুতা দিয়ে নাভি বেঁধে দিতে হবে। নাভিতে একবার ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে এছাড়া কোন মলম দেয়ার দরকার নেই্ নাভি সব সময় শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

* শিশুর ত্বকে কোন প্রকার তেল বা লোশন মাখানোর প্রয়োজন নেই। তবে অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো। শিশুকে গোসল করানোর আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে মেসেজ করা ভালো এবং মাঝেমধ্যে সকালের নরম রোদে শিশুকে রাখতে হবে। 

নবজাতকের কাজল দেওয়া ঠিক নয় সংক্রমিত হতে পারে।

* নবজাতককে দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজন যেন ঘরে ভিড় না করে কারণ অনেকের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ত্বকের সংক্রমণ থেকে নবজাতক সংক্রমিত হতে পারে।

* যেসব লক্ষণ দেখলে নবজাতককে চিকিৎসঙ্গের কাছে নিতে হবে সেগুলো হলো-জ্বর আসা অথবা শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। 

শিশু বুকের দুধ টানতে না পারলে, খেতে আগ্রহী না হলে, শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিলে, বুকের খাচা দেবে গেলে, শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে, বেশি নড়াচড়া না করলে এগুলো বিপদ চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া শিশুর জন্ডিস দেখা দেওয়া যেমন হাত পা তালু হলুদ হওয়াটাও বিপদের লক্ষণ।

নবজাতক শিশুর যত্নে যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেসব জেনে নিন

নবজাতক শিশুর যত্নে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। নতুন বাবা মায়েদের জন্য নবজাতক শিশু যত্ন নেয়াটা একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তাই নবজাতক শিশু যত্ন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা নিম্নে শেয়ার করা হলো:

* শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সবসময় হাত ধোয়া সম্ভব না হলে জীবন ও নাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে না। পরিবারের অন্যান্যদেরও হাত ধুয়ে শিশুকে কোলে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

* নবজাতক শিশুকে সঠিক সময় খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রতি দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পরই খাওয়ানো উচিত। প্রথম ছয় মাসের শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ভালো মায়ের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনে সকল পুষ্টি।

অ্যান্টি বডি যা শিশুর বর্ধন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। অনেক সময় বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে দুধ পায়না কিংবা খেতে পারেনা সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

* শিশুদের প্রতিবার খাওয়ানোর পর তাদের বিশেষ এক পদ্ধতিতে ঢেকুর তুলানো হয়। বাচ্চারা খাওয়ার সময় বাতাস গিলে ফেলে এবং পেটে গ্যাস জমে যায় আর এই কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে শিশুর পেটের এই অতিরিক্ত বাতাস বের করে দেওয়া যায় শিশুকে ঢেকুর তুলানোর মাধ্যমে।

* শিশুদের চোখে প্রায়ই ময়লা দেখা যায়। বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে খালি হাত ব্যবহার করা যাবে না। কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে তা হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে বাচ্চার চোখ আলতোভাবে মুছে নিতে হবে।

* ছোট শিশুদের নখ দ্রুত বড় হয় তাই নিয়মিত তা কেটে দিতে হবে। নক কাটতে বেবি নেলকাটার বা কাঁচের মতো বেবি নেলক্লিপার ব্যবহার করুন। তবে যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন তা ব্যবহারের আগে জীবাণুনাশক মেশানো পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।

* দুধ খাওয়ানোর কারণে শিশুর জিভায় সাদা একটি আস্তরণ পড়তে দেখা যায়। এই আস্তরণ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয় তা না হলে শিশুর জিভে ঘা হয়ে যেতে পারে। এটি পরিষ্কারের জন্য নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন সপ্তাহে একদিন মুছে দিন ছোট বাবুর জিব্বা।

* বাচ্চাদের কান ও নাক পরিষ্কার করার জন্য কটন বাড ব্যবহার করুন। বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলে সতর্কতার সাথে কান্না না পরিষ্কার করতে হবে। খেয়াল রাখুন কানের পর্দা বা নাকের খুব বেশি ভেতরে যেন আঘাত না লাগে। পরিষ্কার করার আগে কটন বাডসে হালকা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন।

* শিশুর শরীর মালিশ করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ও হজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এটি। শিশুকে গোসল করানোর আগে হাতে অল্প পরিমাণে বেবি অয়েল নিয়ে মালিশ করুন। এতে শিশুর শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয় এবং শিশুর ঘুম ভালো হয়।

* সকালবেলা উঠে বাচ্চাদের সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ রাখতে হয় কারণ সূর্যের আলোতে আছে ভিটামিন ডি। এতে শিশুদের হাড়ের বিকাশের জন্য প্রয়োজন আর এতে আছে ক্যালসিয়াম যা শিশুদের হার গঠনের সহায়তা করে।

* নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার আরেকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডায়াপার পরিবর্তন করা। যেহেতু শিশু বুকের দুধ বা ফর্মুলা খেয়ে থাকে, ঘন ঘন প্রসাব করে থাকে যে কারণে দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আটটি ডায়পার চেঞ্জ করা দরকার হয়। 

খেয়াল করে সময়মতো ডা পার্টি বদলে দিন। সমস্যা তৈরি করতে পারে।

* শিশুকে সবসময় সুতি কাপড় পরানোর অভ্যাস করুন। পোশাক পরানোর আগে খেয়াল রাখুন কোন পোকা বা ময়লা যেন পোশাকে না থাকে।

* শিশু পোশাক জীবাণুমুক্ত করার জন্য মৃদু এবং কোমল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। নবজাতক শিশুর আবহাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কারণে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শীতে শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন

শীতের সময় নবজাতক শিশুর যত্ন নিতে হয় খুব সতর্কভাবে। কারন ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছেই তারপর ঠান্ডা কারণে শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হয়। সর্দি-কাশি, জ্বর-ঠান্ডা, গলা ব্যথা এসব থাকে নবজাতককে সবার আগে দূরে রাখতে হবে। 

কারণ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শীতকালে নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিবেন তা আজকের আলোচ্য বিষয়:

* শিশুকে হালকা গরম পানিতে গোসল করানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন গোসল করানো সম্ভব না হলে তবে অন্যদিন কেবল একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে কাপড় পরিবর্তন করার আগে শরীর মুছে দিন। এতে শিশুর অসুস্থতা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকবে।

* শীতকালে শীতল এবং শুষ্ক বাতাস বাচ্চাদের ত্বকের সমস্ত আদ্রতা শুষে নেয়। ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে তাই দিনে কমপক্ষে দুইবার অলিভ অয়েল তেল মেসেজ করুন। এটা বাচ্চার গভীরতম টিস্যুগুলোতে শোষিত হয় ফলে মশ্চারাইজ থাকে। 

নিয়মিত মেসেজ বা মালিশ শিশুর হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।

* সূর্যের আলোতে থাকে ভিটামিন ডি যা শিশুর হাড় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাকে গোসল করানোর পরে তার শরীরের রোদ লাগান সূর্যের আলো জীবাণু ধ্বংস করে শিশুর শরীরে উষ্ণতা সরবরাহ করে।

* শীতকালে বাচ্চাকে ভারী কম্বলে ঢেকে রাখা ঠিক নয় কারণ এতে শিশুর অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। এতে শিশুরা তাদের হাত এবং পা নাড়াচাড়া করতে পারে না তাই হালকা কম্বল ব্যবহার এবং ঘরের তাপমাত্রাকে সর্বোত্তম রাখা উচিত।

* শিশুকে লম্বা হাতার শার্ট এবং তারপরে জ্যাকেট ক্যাপ যুক্ত করতে পারেন। বাচ্চাদের সবসময় নরম পোশাক কিনুন এবং কখনো তাদের মাথা ঢেকে রাখতে ভুল করবেন না।

* শীতকালীন রোগ গুলো থেকে শিশুকে রক্ষার জন্য তাদের নিয়মিত টিকা দিন। এছাড়া যদি আপনি অসুস্থ হন তবে শিশু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

* শীতের সময় শিশুদের ফ্রিজে থাকা যে কোন খাবার দেওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে গরম করে নিতে হবে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল সম্ভব হলে প্রতিদিন খাওয়াতে হবে। এতে বাচ্চাদের সর্দি বা ঠান্ডা লাগার সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।

প্রচণ্ড গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার বিশেষ কার্যকরী টিপস জানুন

শীত বা গরম যে রে তুই হোক না কেন শিশুদের প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। তবে অন্য সময়ের তুলনায় গরমের সময়ে শিশুদের জন্য ভীষণ কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাদের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু খেয়াল রাখতে হয়। 

শিশুর অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয় বলেই গরমে তাদের নেওয়া দরকার কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা। আসুন তাহলে গরমে কিভাবে শিশুর যত্ন নেওয়া যায় সে সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাকঃ

* গরমে শিশুদের সবসময় সুতি ঢিলা ঢালা আরামদায়ক জামা পড়াতে হবে। সিনথেটিক কাপড় কোনভাবে পড়ানো যাবে না। সুতি কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। তাই গরমে বাচ্চাকে সুতির জামা পরিয়ে দিন। 

জামা ঘামে ভিজে গেলে সাথে সাথে খুলে শরীরের ঘাম মুছিয়ে দিন। হালকা করে পাউডার দিতে পারেন ঘাম শুকিয়ে এলে অন্য জামা পরিয়ে দিন। গায়ের ঘাম যেন গায়ে না শুকা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে।

* প্রচন্ড গরমে শিশুকে বাইরে খেলতে যাওয়া থেকে বিরত রাখুন। কারণ গরমে বাইরে দৌড়াদৌড়ি ,ছোটাছুটি করলে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই ঘরে ফ্যানের নিচে শিশুর খেলার ব্যবস্থা করুন।

* গরমে ঘেমে গিয়ে শিশুর পানি শূন্যতা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পর পর পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন তবে এ ক্ষেত্রে ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। 

তবে যেসব শিশুদের বয়স ছয় মাসের কম তাদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাবার। সেক্ষেত্রে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

* গরমকালে শিশুকে শাকসবজি, মাছ, খিচুড়ি ইত্যাদি সহজে পরিপাক ও শোষণ হয় এমন খাবার দিতে হবে। যতটা সম্ভব তরল বা নরম খাবার দেয়া উচিত। গরমে তেলে ভাজা, বেশি মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।

* গরমকালে শিশুকে অবশ্যই প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। গোসলের পর শিশুর মাথা ভালো ভাবে মুছে দিন। ভেজা চুল থেকে শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশি হতে পারে। তাই ফ্যানের নিচে দাঁড় করিয়ে ভালোভাবে শিশুর গা মাথা মুছে দিতে হবে।

* শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে সাথে বাচ্চার মাথার ত্বকেও গরমে ঘেমে যায়। চুলের গোড়ায় ঘাম জমে তা থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব চুল কেটে ছোট করে রাখতে হবে যেন ঘেমে গেলেও চুল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। গোসল করানোর অভ্যাস করতে হবে।

* বাচ্চাকে যে ঘরে রাখা হয় সে ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দরজা জানালা খোলা রাখুন সম্ভব হলে শিশুকে বারান্দায় বসিয়ে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

উপরোক্ত সতর্কতা সত্ত্বেও আপনার শিশু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখুন যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে আপনার শিশুকে নিয়ে যাবেন যেমনঃ

বারবার বমি কিংবা পাতলা পায়খানা, প্রস্রাবের পরিমাণ যদি কমে যায়, জিব্বা শুকিয়ে যায়, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে।

নবজাতকের পরিচর্যার ১০টি টিপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক

শিশু জন্মের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় কালকে নবজাতক বলা হয়। এই সময় নবজাতকের প্রয়োজন পড়ে বাড়তি পরিচর্যার। নবজাতকের সুস্থতায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। ওর নাজুক কোমল শরীর খুব সহজেই বিভিন্ন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। 

নবজাতকের পরিচর্যার জন্য কিছু টিপস অনুসরণ করতে হয়। তাই এসব টিপস নিয়ে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।

* শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে নিজের হাতটি সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ব্যবহার করতে পারেন জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার। পরিবারের অন্যান্যদেরও এই অভ্যাস গড়ে তুলুন। হাত ধুয়ে নিন শিশুর ডায়াপার বা প্রস্রাব পায়খানা করার কাপড় কাঁথা পাল্টানোর পরেও।

১. জন্মের সাথে সাথে শিশু কে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে মুছে নিবেন। আরেকটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে মাথা ও শরীর জড়িয়ে রাখতে হবে। 

দেরি না করে নবজাতককে দ্রুত মায়ের কাছে দিতে হবে কারণ মায়ের শরীরের উষ্ণতা নবজাতকের জন্য প্রয়োজন। জন্মের তিন দিনের মধ্যে শিশুকে গোসল করানো যাবে না।

২. শিশুর চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে খালি হাত ব্যবহার করা যাবে না। কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে নিন হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে মুছে নিন বাচ্চার চোখ। 

অনেক সময় বাচ্চার চোখে বুকের দুধ যেতে পারে তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ বাচ্চার চোখে বুকের দুধ ঢুকে গেলে বাচ্চার চোখে প্রধান হতে পারে।

৩. দুধ খাওয়ার কারণে শিশুর জিব্বা সাদা আস্তরণ পড়তে দেখা যায়। পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করে মুছে নিন আপনার ছোট্ট বাবুর জিব্বা।

৪. বাচ্চার কার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এজন্য কটন বার্ডস ব্যবহার করতে পারেন।

৫. নবজাতকের সবসময় নরম সুতি কাপড় পরানোর চেষ্টা করবেন। শিশুকে পোশাক ও ডায়াপার পড়াতে গিয়ে খেয়াল রাখুন তা আরামদায়ক এবং উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন কি -না।

৬. বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বাড়ে। শিশু ঘুমিয়ে গেলে নখ কাটুন তাহলে কেটে যাওয়ার ভয় থাকবে না। নখ কাটার জন্য নেইল কাটার ব্যবহার করতে পারেন তবে সেটা ব্যবহারের আগে জীবাণু নাশক মেশানো পানিতে একবার ধুয়ে নিবেন।

৭. শিশুর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখতে হবে। ঘর যেতে যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে দিন। অতিরিক্ত কাপড়চোপড় কাঁথা বা চাদরের প্রয়োজন নেই। কারণ ছোট্ট শিশুদের শরীর এমনিতেই গরম থাকে।

৮. নবজাতক কে গোসল করানোর জন্য একটা সমতল জায়গায় তোয়ালে পেতে নিন। প্রথমে নরম কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে শিশুর মাথা মুছে দিন। 

সাথে সাথে আবার শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা মুছে দিন কারণ মাথা ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। এরপর গলা বুক ও হাত মুছুন।

৯. শিশুর কান পরিষ্কার করার জন্য কটন বার্ডস ব্যবহার করতে পারেন। কানের পর্দা আঘাত লাগতে পারে এজন্য সতর্ক থাকুন। পরিষ্কার রাখুন কানের উপরিভাগ নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিন প্রতিদিন।

১০. নাভি কাটার পর ডাক্তাররা তা ক্লাব করে বা পেচিয়ে ক্লিপ এর মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্লাম্প বা টেপ লাগিয়ে দেন। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা কম থাকে। নাভি শুষ্ক রাখুন যত বেশি শুষ্ক রাখা যাবে তত দ্রুত নাভি শুকিয়ে ঝরে যাবে। নাভি তেল, সাবান, পানি থেকে দূরে রাখুন।

পরিশেষে

প্রিয় বন্ধুগণ আজকেরই আর্টিকেলটি যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন আশা করি তারা কিভাবে শিশুর বা নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন পাশাপাশি আমি আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এ ধরনের আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। সবশেষে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্যতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url